আমাদের ফাল্গুনী – ফাল্গুনী সাহা। গলাচিপা সদরের বটতলায় যার শৈশব শুরু। শৈশবের শুরুর দিনগুলো ভাল কাটলেও সাত বছর বয়সের এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে তাঁর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। তখন সে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। পাশের বাড়ির একটি ভবনের ছাদে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিল ফাল্গুনী। হঠাৎ বিদ্যুতের তারের সঙ্গে শক লেগে তার হাতের প্রায় কনুই পর্যন্ত পুড়ে যায়। প্রথমে এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। কয়েক দিন যাওয়ার পর দেখা যায়, তার বাঁ হাতের দুটি আঙুল পচে পড়ে গেছে। তখন উন্নত চিকিৎসা করানোর মতো টাকা তার বাবার ছিল না। পরে এলাকার লোকজনের আর্থিক সাহায্য নিয়ে চিকিৎসার জন্য কলকাতা যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা ক্যানসারের আশঙ্কায় তার দুই হাতের প্রায় কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলেন।
এতটুকু পড়ে হয়তো মনে হতে পারে – এটি একটি প্রদীপ নিভে যাওয়ার গল্প। কিন্তু তা নয় মোটেই। সুস্থ হওয়ার পর সে নিজের ইচ্ছায়ই স্কুলে যাওয়া শুরু করে। পরে স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায় এভাবে লেখার কৌশল তার আয়ত্তে আসে। ফাল্গুনীর ভাষায় তার ক্লাসমেটরা – “কে কীভাবে দেখত, তা জানি না। তবে আমার মনে হয়েছে, সবাই আমাকে বন্ধু মনে করত। বিভিন্ন সময় তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।” লেখা আয়ত্ত্ব করার পর সে সেটুকুকে সাফল্য মনে করে থেমে যায়নি। বরং সামনে চলার প্রেরণা হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর সেই প্রেরণা আর প্রচেষ্টায় গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ প্লাস পেয়ে সে এস.এস.সি পাশ করেন।
গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়। তখন ঢাকার ট্রাস্ট কলেজের অধ্যক্ষ বশির আহাম্মেদ ভূঁইয়া আরও ভালো পড়াশোনার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং ট্রাস্ট কলেজে বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন। ফাল্গুনী সেখান থেকেও এ প্লাস পেয়ে সে এইচ.এস.সি পাশ করেন।
এর পর ভর্তিযুদ্ধে সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগে নিজের অবস্থান করে নেন। ইতমধ্যে গ্রাজুয়েশন শেষ করা ফাল্গুনী কদিন বাদেই মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিবে । আর এবেলায় না হয় নাই বললাম তার গানের গলার কথা।
ফাল্গুনী ভবিষ্যতে কি করবেন জানিনা – কিন্তু যা করে দেখিয়েছে তা সত্যিই প্রেরণার। যেখানে আজকাল সামান্য কিছুতে মানুষ নিজের জীবন বিসর্জন দেয় সেখানে ফাল্গুনী দেখিয়েছে কীভাবে জীবনে নিজের অবস্থান গড়তে হয়। তার সাফল্যের পুরো ভাগীদার সে – তার প্রচেষ্টা। আমরা শুধু তাকে নিয়ে গর্ব করতে পারি কেননা পুরো দেশের এই হার না মানা গর্ব আমাদেরই একজন – আমাদের এলাকার রত্ন। তার জন্য ভালোবাসা সবসময়।
Leave A Comment